আমাদের তখন টেনিস বল যুগ চলছে । সবুজ অথবা সাদা রঙের টেনিস বল - বল পিটিয়ে ফাটিয়ে ফেলার মত শক্তি পোলাপানের বাহুতে তখন ও জমে নি :। তারপরও মাঝে মাঝেই দুয়েকটা বল ফেটে যেত । তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পশম উঠে গিয়ে নেড়া না হওয়াতক টিকে থাকতো ।
ব্যাট কিনতাম না কোন । কোন না কোন বাড়িতে কাঠমিস্ত্রী থাকতোই । সুযোগ মত আব্দার - একটা ব্যাট বানিয়ে দিতে হবে । নিরাশ করতেন না অনীল মিস্ত্রী অথবা সালাম মিস্ত্রী । রাতের অবসরে মনের মাধুরী মিশিয়ে বানাতেন ব্যাট-তাতে আবার ফুলের নকশা আকা হত
সদ্য ধান কেটে নেয়া মাঠে কোদালের আচরে পিচ বানানো । তারপর সকাল বিকাল ধুন্দুমার বলিং-ব্যাটিং । অধিকাংশ ব্যাটসম্যানের প্রিয় শটের নাম সুইপ শট । বল উড়িয়ে সামনে দিয়ে মাঠরে বাইরে ফেলার সামর্থ নেই- তাই ঘুরে পিছন দিকে মারা । সহযে রান পাওয়ার উপায় ।
বোলিঙে মনে হচ্ছে ভালোই নাম হয়েছিলো ওপেনিঙ বোলার । ব্যাটসম্যানদের আতঙ্ক-হাহাহা - একবার তো চামিন্দা ভাসের মত প্রথম ৩ বলে হ্যাট্রিক- কি উল্লাস আহা...
অন্য টিমের সাথে আগে থেকে ফিক্সড করে নেয়া খেলার নাম তারিখের ম্যাচ । হয়তো বিকেলবেলা খবর পেতাম সিদ্দীকের কাছে,
কাইলগো বাজারের লগে তারিক আছে...
রাতে অনেক টেনশন নিয়ে ঘুমাতাম-বাজারের টিমটা খুব শক্ত-ওরা হাইস্কুলের মাঠে খেলে-আমাদের মত ধানখেতে- পিচ বানিয়ে না ।
সাইফুল ছিলো আমার বোলিঙ পার্টনার- বিতর্ক ছিলো ওকে নিয়ে- খুব জোরে বল মারতে পারতো-কিন্তু পোলাপানের মতে ও “হাত ভেঙে” বল মারতো-যাকে ক্রিকেটিয় ভাষায় চাকিং বলা হয় .... আমরা ঝগড়া করতাম-গোয়ারের মত বলতাম- এইডা নো বল না, ও সবসোমায় এইরহম ই বল করে .. আমাদের সিষ্টেম অনুযায়ী আম্পায়ার থাকতো ব্যাটসম্যানদের একজন - ফলে ঝামেলাটা প্রায়ই বাধতো ।
সাইফুলের আম্মা মারা গেছে এবারের কুরবানীর ঈদের পরদিন । মোবাইলে শুনেছি, মেঝো মামী বলেছেন, সাইফুলের কি কান্দন...
শাহীন, আমার থেকে বয়সে বড় ছিলো, পড়তোও একক্লাশ উপরে । কিন্তু খেলার মাঠে আমার একান্ত ভক্ত সে । আমি যে দলে সেও সেই দলে খেলবে । মনে আছে, মারামারি লাগছিলো একবার- শামীমের সাথে.. আমি ঘুসাঘুসি করছি-তুমুল বেগে- এমন সময় হই হই করতে করতে শাহীন উল্কার মত ছুটে এলো- ধুমধাম লাত্থি শামীম কে । আমি নিজেই হতবাক- মারামারি থামানোর চেষ্টা এবার আমার নিজের-
শাহীনের কোন খবরই জানি না... লাষ্ট একবার দেখেছি বছরখানেক আগে, দুর থেকে... সামনা সামনি হতে ইচ্ছা হয়নি..কে জানে কেন ?
ব্যাটিং এ ভালো ছিলো শাহাদাত-হাফিজ-মিজান-রাহেল ... হাফিজ আবার উইকেট কিপিং করতো ।
গ্রামের মাঠের সেই টিমটার কথা ভাবলেই মাথার ভিতর বেজে ওঠে এই কোরাসটা - “আউট-সাউট-কঠের বল” কিছু একটা উত্তেজনার হলেই পোলাপান চিল্লাত, “আউট-সাউট-কঠের বল”-
তিনটা শব্দই অবশ্য আমাদের গ্রাম্য ক্রিকেটীয় পরিভাষা- তবে জগাখিচুরিটা কেমন করে হলো টের পাইনি ...
লেখাটা পড়ে খুব মজা পেলাম।
ReplyDeleteসন্ধ্যাবাতির ব্লগ থেকে তোমারটার লিঙ্ক পেলাম।
এটাই প্রথমবার আসা তোমার এখানে।
আবার আসবো, ভাল লাগছে।
নতুন লেখা চাইইইই!!
ReplyDeleteপাই শুভেচ্ছা :))
toxoid_toxaemia : স্বাগতম এবং থ্যাক ইউ !
ReplyDeleteশূন্যআপু : আপনাকে ∏-uspo এর শুভেচ্ছা :))