হে লোক সকল! মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারও পিতা নন, বরং আল্লাহর রাসূল ও নবীদের ধারাবাহিকতা সমাপ্তকারী ।
- এ হচ্ছে সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ আল কুরআনের সূরা আহযাব এর ৪০ নম্বর আয়াতে সু-স্পষ্ট ঘোষণা ।
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন (জীবনব্যাবস্থা) কে পরিপূর্ণ করে দিলাম । এবং তোমাদের জন্য ইসলামকেই জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম ।
- সুরা মা'য়েদা : ৩য় আয়াত ; রাসুলুল্লাহ সা এর বিদায় হজ্জের পরপর ই নাযিলকৃত আয়াত ।
মিথ্যা নবুওয়্যতের দাবীদারেরা :
রাসুলুল্লাহ সা এর জীবদ্দশাতেই মানুষকে বিভ্রান্ত করার এই পন্থা শুরু হয় । এক্ষেত্রে প্রখম ব্যাক্তিটি ছিলো আসওয়াদ আল আনসারী । নবুওয়্যতের দাবীদার এই ব্যাক্তি ৩ মাস ধরে তার প্রচারনা চালিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় ।
নবুওয়্যতের দাবীদার তৎকালীন আরো কয়েকজন হলো,
১. তুলায়হা বিন খুওয়ালিদ,
২. মুসায়লামাতুল কাজ্জাব ,
৩. সাজাহ বিনতে আল হারিস
এর মধ্যে তুলায়হা রাসুলুল্লাহ সা এর অসুস্থার সুযোগে নিজেকে নবী দাবী করে বসে । এই ব্যক্তির কারনে শহীদ হন উক্কাশা ইবনে মিহসান আসাদী (রাঃ) ও ছাবিত ইবনে আকরাম বালাবী (রাঃ) এর মত প্রখ্যাত সাহাবা । পরবর্তীতে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর কাছে পরাজিত হয়ে ইনি আন্তরিক তওবা করে ইসলামে ফিরে আসেন এবং শেষপর্যন্ত অটল থাকেন ।
মুসায়লামা কাজ্জাব আর সাজাহ (মহিলা) এরা বিয়ে করে যুগ্মভাবে নবীত্বের দাবীদার হয়ে বসে ! এদেরকে জাহান্নামে পাঠাতে গিয়ে অগণিত কুরআনের হাফেজ সহ প্রায় হাজার জন সাহাবাকে শাহাদাত বরন করতে হয় ।
রাসুল সা এর মৃত্যুর পরে আবুবকর রা কে এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় অতিক্রম করতে হয় । অসংখ্য লোককে বিভ্রান্ত করার সুযোগ পায় এরা । আবুবকর রা এর কঠোর দিক নির্দেশনায় সম্পূর্ণরূপে ধুলিস্যাত করে দেয়া হয় মিথ্যাবাদী বিভ্রান্তকারীদের !
এরপর....
বহুদিন এধরনের কোন অপছায়া মুসলমানদের মধ্যে দেখা যায় নি ।
পলাশী-পরাজয়ের পর উপমহাদেশে বিদ্রোহের দাবানল :
পলাশীর প্রান্তরে পরাজিত হবার পূর্ব পর্যন্ত উপমহাদেশে শাসনভার ছিলো মুসলমানদের কাছে । খুব স্বাভাবিকভাবেই দখলদার ইংরেজ সরকারকে একটা মুহুর্তের জন্যও শান্তিতে থাকতে দেয়নি এই জনপদের মুসলমানরা । আর তাদেরকে গাইড করেছেন তৎকালীন আলেমসমাজ । এসময়ে আলেমদের ওপর নেমে আসে কঠোর অত্যাচার আর হত্যাযজ্ঞের খড়্গ ।
দিল্লীর চাঁদনীচক থেকে খায়বার পর্যন্ত এমন কোন গাছ ছিল না যার শাখায় উলামায়ে কেরামের গর্দান ঝুলেনি.. ... .. ... ..ইংরেজদের ফাঁসির কাষ্ঠে প্রতিদিন ৮০ জন করে আলেমকে ঝুলানো হতো
- এটা ইংরেজ ঐতিহাসিক টমসন এর লেখা ।
১৮৫০ থেকে ১৮৫৭ সালের মধ্যে ইংরেজদের নিয়মিত সেনাবাহিনীর প্রায় ৩৩ হাজার সৈন্যকে অন্তত ১৬ টি অভিযান পরিচালনা করতে হয় আলেমদের ইন্ধনে স্বাধীনতার সংগ্রামরত মুসলিম মুজাহিদদের বিরুদ্ধে ।
উইলিয়াম হান্টারের দি ইন্ডিয়ান মুসলিম বইয়ে ভারতে বৃটিশ শাসনের জন্য মুসলমানদেরকে "স্থায়ী বিপদ" নাম দিয়ে চিহ্নত করা হয় ।
১৮৬৪ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত ১৪ হাজার আলেমকে ফাঁসি দেয়া হয়। কোরআনের তিন লাখ কপি জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং ৮০ হাজার মাদ্রাসা ধ্বংস করা হয় এই স্থায়ী বিপদ থেকে ইংরেজ সাম্রাজ্য রক্ষা করার জন্য ।
কিন্তু...
পুরোপুরি ব্যার্থ হয় ইংরেজ রাজ !!
উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বেই কমিশন গঠন করে ১৮৬৯ সালে পাঠানো হয় কারন সন্ধানের জন্য । এরা আবিষ্কার করে স্বাধীনতার জন্য এমন আক্ষেপ-এমন সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার আকুতি- সবকিছু হারিয়েও অদম্য মুসলিম সমাজের প্রেরণাস্থল ।
রিপোর্ট আসে...
"ভারতীয় মুসলমানরা কঠোরভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। তাদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনেই নির্দেশ রয়েছে বিজাতীয়দের শাসন মানা যাবে না এবং শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে জিহাদ করতে হবে। তাদের ধর্মীয় নেতারা ফতোয়া জারী করেছে যে, ভারত বর্ষ দারুল হরব বা শত্রুদেশে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরজ হয়ে পড়েছে। জিহাদের প্রেরণায় মুসলমানরা উন্মাদের মত আত্মাহুতি দিতে পারে"
বুদ্ধিমান হান্টার পরামর্শ পাঠান কেন্দ্রে,
মুসলমানদের মধ্য হতে আমাদের আস্থাভাজন এমন একজন পন্ডিত ব্যক্তিকে নবী হিসেবে দাঁড় করাতে হবে, যিনি বংশ পরম্পরায় আমাদের আস্থাভাজন বলে প্রমাণিত হবেন। দারিদ্র-পীড়িত ধর্ম-জ্ঞানহীন মুসলমানদের মধ্যে তার নবুয়তী তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে সকল প্রকার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার নিশ্চয়তা দিতে হবে। অতঃপর সেই নবী এক সময় ঘোষণা দিবে, আমার নিকট এই মর্মে ওহী এসেছে যে, ভারতবর্ষে বৃটিশ সরকার আল্লাহর রহমত স্বরূপ এবং ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এখন থেকে জিহাদ হারাম করেছেন। এভাবে মুসলমানদের জিহাদী চেতনা দুর করতে হবে। অন্যথায় ভারতে আমাদের শাসন দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হবে না।
এই হলো পেছনের কাহিনী । এরপর ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় গোলাম কাদীয়ানীর নবী হবার প্রচেষ্টা চলতে থাকে । ইংরেজদের প্রতি আস্থার প্রকাশ ঘটান এই ব্যাক্তি বিভিন্ন সময়ে...
আমার মরহুম পিতা আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকে শুধুমাত্র ইংরেজ সরকারের খেদমতের জন্য কোন কোন যুদ্ধে প্রেরণ করেছেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারের সন্তষ্টি অর্জন করেছেন। আর এ অধমের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মির্জা গোলাম কাদের যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনিও পিতা মরহুমের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মনে প্রাণে বৃটিশ গভর্ণমেন্টের খিদমতে নিয়োজিত ছিলেন।
- গোলাম কাদীয়ানী শাহাদাতুল কুরআন গ্রন্থ।
জিহাদ নিষিদ্ধকরণ ও ইংরেজ সরকারের আনুগত্য সম্পর্কে আমি এত বেশী পুস্তক রচনা করেছি ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছি যে, ঐগুলো একত্র করলে ৫০ টি আলমারী ভর্তি হয়ে যাবে।
- গোলাম কাদীয়ানীর ইয়াকুল কুলুব গ্রন্থ ।
"হে পূণ্যময়ী ভারত সম্রাজ্ঞী মহারাণী ভিক্টোরিয়া! তোমার মহত্ব ও সুখ্যাতি তোমার মোবারক হোক। এদেশের ওপর খোদার দৃষ্টি রয়েছে। যে প্রজার ওপর তোমার মতা বিরাজমান তাদের ওপর খোদার রহমতের হাত রয়েছে। তোমার পবিত্র নিয়তের অনুপ্রেরণায় খোদা আমাকে পাঠিয়েছেন। যাতে পরহেজগারী, সৎচরিত্র ও শান্তির পথ দুনিয়াতে আবার প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
- ইংরেজদের অনুপ্রেরণায় নবী হওয়ার কথা প্রকাশ করে ফেলেন এভাবে তার সেতারায়ে কায়সারাহ বইয়ে ...
তার বর্তমান অনুসারীদের বিভ্রান্তি :
গোলাম কাদীয়ানীর বর্তমান অনুসারীরা প্রচার করতে চায় সে নিজেকে নবী দাবী করেনি । কিন্তু এটা তাদের বিভ্রান্তি অথবা বিভ্রান্ত করার আরেক অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না.. অবশ্য গোলাম কাদীয়ানী এই বিভ্রান্তির শুরুটা নিজেই করে রেখেছিল ।
দেখুন, ...
- আমি মাহদী এবং ব্রিটিশ সরকার আমার তরবারি । আল্লাহ এই সরকারকে সাহায্য করার জন্য ফেরেশতা প্রেরন করেছেন - ১৯১৮সালের ৭ই ডিসেম্বর কাদিয়ানী পত্রিকা "আল ফজল" এ তার বক্তব্য ।
- ১৮৮৫ সালে নিজেকে তিনি মুজাদ্দেদ হিসাবে দাবী করেন
- ১৮৯১ সালে নিজেকে মাহদী হিসাবে আবার দাবী করেন
- এক-ই বছরে সে আবার দাবী করে প্রতিশ্রুত মসীহ বলে
- ১৯০১ সালে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ নবী বলে দাবী করে বসে
মীর্যা গোলাম কাদিয়ানী ১৮৯১ সালের ২১শে অক্টোবর তাবলীগে রেসালাতের ২য় পাতায় বলেন : হযরত মোহাম্মদ ( স: ) আল্লাহর প্রেরিত শেষ নবী , তার পরে আর কোনো নবী আসবেন না ।
"মেরাতে কামলাতে ইসলাম" বইয়ের ৩৮৩ প্ষ্টায় তিনি বলেন : আমি নবী নই তবে আল্লাহ আমাকে নবায়নকারী কালিম বানিয়েছেন ।
এইসাথেই আবার , "হাকীকাতুল ওহীর" ৬৮ পাতায় বলতেছে : ঐ আল্লাহর শপথ , যার হাতে আমার প্রান , তিনিই আমাকে প্রেরন করেছেন এবং নবী নামে অভিহিত করেছেন
গোলাম কাদীয়ানীর ছেলে-তার দ্বিতীয় খলিফা কি বলে, শোনেন,
আমাদের উপর বৃটিশসাম্রাজ্যের অনেক অবদান রয়েছে। আমরা পূর্ণ শান্তি ও আরামের সহিত আমাদের উদ্দেশ্য সাধন করছি এবং বিভিন্ন দেশে প্রচারের উদ্দেশ্যে আমরা যেতে পারছি। বৃটিশ সরকার এখানেও আমাদের সাহায্য করছে। এটা হলো আমাদের উপর তাদের পূর্ণ করুণা ও দয়া
- 'বারাকাতুল খেলাফত' নামক গ্রন্থের ৬৫ পৃষ্ঠা ।
গোলাম কাদীয়ানির নিজের বানী দিয়েই শেষ করি...
আমাদের হিতাকাংখী সরকারের জন্য আমরা সকল প্রকার বিপদ সহ্য করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো। কেননা, তার করুণা ও দয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বৃটিশ সরকারের জন্য আমরা আমাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ উৎসর্গ করবো। আর প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে উহার মর্যাদা ও উন্নতির জন্য আমরা সর্বদা প্রার্থনা করবো।
- গোলাম আহমদের রচিত 'আরিয়া ধর্ম' পৃষ্ঠা- ৭৯ ও ৮০...
আরো জানতে SWI বা wiki থেকে পাতা উল্টান ...
ধন্যবাদ, তথ্যবহুল লেখার জন্য।
ReplyDelete