প্রথম যখন রোজা রাখার অভিজ্ঞতা শুরু হলো, তখন ছিলো আমার ক্রিকেটবেলা । দা' দিয়ে বানানো কাঠের এবরো-থেবরো ব্যাট আর ন্যাড়া টেনিস বল নিয়ে সারাদিন কেটে যেতো খুব দ্রুত ।
অনেক ছোট ছিলাম । ৮ কি ৯ বছর বয়স । শুরুটা পুরো ত্রিশ দিয়েই হয়েছিলো । মানে প্রথমবার থেকেই পূর্ণমাসব্যাপী সবগুলো রোজা রাখতে পেরেছিলাম B-) সমবয়সী আরো কয়েকজন থাকায় ব্যাপারটা ছিলো জেদের মত । কেউ রোজা ভাঙলো তো সে হেরে গেলো ...
সেহরী খাওয়াটা খুব ঝামেলার ব্যাপার ছিলো । সেহরী না খেয়ে যে দু'চার দিন রোজা রেখেছি, সেগুলো বেশি আরামের ছিলো :) সকালে ডাকতে ডাকতে আম্মার খবর হয়ে যেতো ... খাবার পরে নামাজ ...
কিছুটা বড় হবার পর, সকালে ছয় সাত জনের শুরু হতো দৌড় । ব্যায়াম করতে যাওয়া... হালকা চালে দুলতে দুলতে দৌড়িয়ে এয়াপোর্টের হলদে আলোর ল্যাম্পপোষ্টগুলো পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসা ... রোজার সময়েই কেন যেন এই অতিরিক্ত পরিশ্রম করার জোশটা সবার মধ্যে উদয় হতো .. যত্তসব!!
আলো ফুটলেই প্রথমে বাড়ির উঠোনে শুরু হতো ক্রিকেট ... ক্রিকেট শেষ হলে সাতচারা বা জামরুল গাছের হেলানো ডালটায় গিয়ে ঝাপাঝাপি... বিকেলে মাঠে গিয়ে বড়মাপের ম্যাচ জমতো B-)
প্রথমদিনের রোজাটা একটু কষ্টের ছিলো । বিকেলের দিকে বেশ কাহিল হয়ে পড়তো পোলাপান... দুয়েকদিন পার করতে পারলে আর সমস্যা হতো না...
একটা কথা মনে এলে এখনো হাসি পায়.. রোজার দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল হতে থাকে, তখন মনে হতো ইফতারে কত না কি যেন খেতে পারবো.. গাছ থেকে পেয়ারা - কোথাও থেকে বড়ই - কোথাও থেকে জামরুল সংগ্রহ করে গুছিয়ে রাখছি.. সন্ধ্যায় খিচুরি কিংবা বুট মুড়ি পিয়াজু খাবার পর খেয়াল করে দেখি অতসব শখের সংগ্রহের প্রতি কোন আগ্রহ ই নেই...
কয়েকদিন আগেও রোজা হতো শীতকালে !! শেষদিকে ঝিঁঝিঁর ঝুম ঝুম ডাকাডাকিতে ঝালাপালা কান .. ইফতারির পর কয়েকজন মিলে শুরু হতো, ঝিঁঝি ধরার পালা... কয়েকটা পাটখড়ি (টাইঙ্গা) মুঠি করে একটা বাঁশের খুটিতে পেটানো হতো, সেই সাথে অদ্ভূত ডাকাডাকি, আয় ঝিঁঝিঁ আয়... তর মায় তরে থুইয়া ডাইল- চাইল ভাজা খায় .. পাটখড়ির পেটানোর শব্দে আকর্ষিত হয়ে ঝিঁঝি এসে গায়ে পড়তো.. তারপর ধরে ফেলাটা কোন সমস্যা ছিলো না :)
ইফতারির প্রাথমিক পর্বটা শেষ হলে নামাজের পরে শুরু হতো অন্য পর্ব ;) বুট আর মুড়ি অথবা খোসাসুদ্ধ কাঁচা কলাই (খেসারি) সেদ্ধ.. আহা এই জিনিসটার কথা মনে পড়লে খুব আফসোস লাগে... দাঁত দিয়ে খুটে খোসা ছাড়িয়ে লবনাক্ত দানা চিবানো , দারুন মজার ছিলো....
গত অনেকগুলো বছর ধরেই রোজার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে... সত্যি-ই ব্যাপারটা বেশ ঝামেলাপূর্ণ এবং মোটামুটি কষ্টকর হয়ে পড়ছে । হলের ডাইনীঙে ভোররাত্রে সেহরী খাওয়ার চাইতে রুমে বসে বিস্কুট খেয়ে রোজা রাখা অনেক বরকতের ব্যাপার । এমনি স্বাভাবিক সময়েই তেলহীন-মশলাহীন ভেজে পোড়া পোড়া করে রাখা আঁশালো মুরগীর টুকরো মুখে রোচেনা, সেই জিনিস খেতে হয় ঘুমভাঙা ভোর রাতে...
গতবারের আগেরবার আমরা তিনজন রুমে রান্না করেছিলাম.. ভালো কেটেছে ওই দিনগুলি.... প্রত্যেকটা দিন একই ম্যেনু- সিনিয়র ভাইয়াটা মাঝে মধ্যে অভিযোগ করার মৃদু চেষ্টা করলেও বিকল্পের অপ্রতুলতার কারনে মেনে নিতেন :) সন্ধ্যারাতে ভাত রান্না করে রাখতাম আর ডিম প্রথমে ফেঁটিয়ে ভেজে প্রচুর পিয়াজ আর অনেকখানি মরিচ হলুদ তেল দিয়ে আবার রান্না করতাম । ভাতের সাথে সেদ্ধ দেয়া আলুটা ভর্তা করে নিলেই হলো... খুবই মজা লাগতো নিজেদের অপটু হাতের এই চড়াইভাতি.. ডাইনিং রুমে খাওয়ার চেয়ে একশ গুন আরামের ব্যাপার ...
ইফতারি মোটামটি উইংএর কয়েকটা রুমের সবাই মিলে একসাথে হয়.. এটা নিয়ে সমস্যা নেই । বেশ জম্পেশ রেগুলারিটি মেইনটেইন হইতেসে...:P রমজানে ইফতারির একটা আকর্ষনীয় ব্যাপার হলো তিনটা ছাত্রসংগঠনের ইফতার মাহফিল । সবাই ভালো ই খাওয়ায়.. ওই তিনদিন বেশ উৎসবের মত একটা ব্যাপার ... :)
এবার কিভাবে কি হবে আমি এখনো ঠিক জানিনা... আমার রুমমেটের ভাবসাব দেখে মনে হয় কিছু একটা প্লান করে রেখেছে... :) ... ওয়েটাইতে থাকি.. দেখি কি বলে...
*************
রোজার প্রস্তুতি কে কিভাবে নিচ্ছেন ? বিনির্মানের আপু-ভাইয়েরা তো একেকজন একেক রকম পারিপার্শিকতায় থাকেন ... পৃথিবীর কোথায় রোজার অভিজ্ঞতা কেমন, জানতে ইচ্ছা করে... বলেন না, প্লিজ.. :DDDD
পড়লাম.. :) আমারও অনেক কিছু মনে পড়ে গেল...
ReplyDeleteরোজার প্রস্তুতি কিভাবে নিচ্ছি এইটা পরে বলবো... :/
ঠিকাসে.. একদিন হলো...
ReplyDeleteএই রোযার মাসে আমার চার মিনিট সময় অপচয় করার জন্য বিবেককে মাইনাস!
ReplyDeleteভাল লিখেছেন। সত্যি বলছি!
ReplyDeleteছোট বেলার কথা কত কিছুই না মনে পড়ছে...। একদিন কি হয়েছিল, .....
প্রস্তুতি নিয়ে বলবো? :P
ReplyDeleteপ্রতি রমজানেই আমরা ফ্যামিলির সবাই মিলে কুরআন খতম দিই । সবাই খুব ব্যস্ত থাকে এজন্য একা একা খতম দেয়া আসলে পসিবল হয় না । তাই সবাই মিলেই দেই... :D
গতকাল তারাবীহর আগে ফ্যামিলি মিটিং এ কে কতটুকু কুরআন পড়বে সেটা তুমুল হৈচৈ-এর মধ্য দিয়ে ঠিক করলাম আমরা... :D
এবার কুরআন পড়ার সাথে সাথে ১০ টা পছন্দমতো সূরা অর্থসহ মেমোরাইজ করতে দিলাম... অবশ্য প্রথমে আমি চাচ্ছিলাম যে ১০টা সূরার অর্থ আগে জানতাম না সেই ১০টা অর্থসহ মেমোরাইজ করতে... কিন্তু সবাই খুব ব্যস্ততার অজুহাত(!) দেখালো.. তাই শেষপর্যন্ত অপশন দিতেই হলো ।
আর মাঝে মাঝে ফ্যামিলি ডিসকাশন তো চলেই...
এই তো... :)
আচ্ছা তুই settings>>formatting এ গিয়ে Time Zone ঠিক করে নিস তো...
ReplyDeleteকমেন্ট করলাম কখন আর দেখায় কখন... বিরক্তিকর.. :/
রোজার বন্ধে খ্যাপ খেলার কথা মনে করিয়ে দিলেন। ঠিক বলেছেন শীতের দিন হওয়ায় কষ্টটা অনেক কম হতো।
ReplyDeleteএখন হলে মারাই যেতাম। ব্যাটটাকে ছোটচাচা বলতেন- ‘কাষ্ঠ-খন্ড’। কত কষ্টই না দিলাম। এই রোজাতেও আমার জন্য বসে থাকতেন দুপুর নাগাদ!!
ভীষণ মিস করি প্র্যাকটিসের ঐ কঠিন দিনগুলি...
O_o= ওস্তাদের ওস্তাদ.........:)
গিরেট.... মজা পাইলাম। কিন্তু একটা হিসাব মিলতাছে না.. এয়ারপোর্ট পাইলা কই? কোথা ছিলা ছোট বেলা?
ReplyDeleteতোমার এই লেখা পড়ে ইচ্ছা করতেছে এখন গলা ছেড়ে কাঁদি। কালকে ইফতার করে বসে বসে বাসায় চিঠি লিখছি। ইয়া লমমম্বা চিঠি। আমি শিউর ঐ চিঠি পড়ে আব্বুম্মু কাঁদবে। কী করব, ভাল লাগেনা। নেট খুলে বসে বসে পুরানো ঢাকার মজার মজার ইফতারীর ছবি দেখি। আর আমার রান্না! মাঝে মাঝে এত চমতকার, আর মাঝে মাঝে ওয়াক থু!;( ...... দেশে চলে যাবো, ভাল লাগেনা।
ReplyDeleteI read the article and the comments.
ReplyDeleteThanks to all.
@ মাহমুদ রহমান,
ReplyDeleteআপনি আসলে জানেন না । ওই চার মিনিটে আপনার ২৮০ টা নেকী অর্জন হইছে... :-| (^_^)
@ Anonymous ,
নামটা লিখলে কি এমন হতো ? ;( একদিন কি কোলাহল করছিলেন, বললেন না তো !!
@ শূণ্য মেয়ে,
শেইম !!! :P ফ্যামিলি মিটিংএও তুমুল হইচই !! o_O ঠিকাছে, থ্যাংকুশ ঘরের কথা পরকে জানানোর জন্য.. ;-) হিহি...
@ Ostader ostad ,
প্রাকটিস আবার কী জিনিস ? গায়ের ছেলেরা এইসব প্রাকটিসের ধার ধারেনা B-) মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ;-D
@ ত্রিভুজ,
BARISAL :)
@ যাযাবর,
এই কাজটা আমিও করি । গুগল ইমেজ সার্চে খুজে খুজে দেখি :PP ঘ্রানে অর্ধভোজন- দর্শনে সিকিভোজন :))) দেশ বিদেশের অনেক ইফতারির ছবি দেখতে পারেন এই লিংকে.. ;))
http://bangla.irib.ir/index.php?option=com_content&task=view&id=5587&Itemid=76
@ umm_abdullah ,
অনেক ধন্যবাদ আমার লেখা পড়ার জন্য :DDDDDDDD
চার মিনিট না মেলা সময় অপচয় হইছে......
ReplyDeleteরমজানের প্রস্তুতি এখনও সেরকম নিতে পারিনি, ব্যাপক দৌড়ের উপর আছি। দোয়া চাই।
রোজাদারের অবস্থা মনে হয় কাহিল। নূতন পোস্ট নেই।
ReplyDeleteনতুন লেখা দিচ্ছনা কেন এখানে ?
ReplyDeleteম্যালাদিন হয়ে গেল তো !