31 July 2008

লাইলাতুল মিরাজের বিষ্ময়যাত্রা

১.পরস্পরের সাপেক্ষে ধ্রুববেগে ধাবমান সকল রেফারেন্স ফ্রেমে পদার্থ বিজ্ঞানের যে কোন সূত্র একই রকম সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা যায়।

২. শূণ্যস্থানে বা বায়ু মাধ্যমে আলোর বেগ ধ্রুব এবং এ বেগ আলোর উৎস ও পর্যবেক্ষকের আপেক্ষিক বেগের ওপর নির্ভরশীল না ।

এবং কোন বস্তু থেকে বিকিরিত আলো আমাদের চোখে এসে পৌছালেই আমরা তাকে দেখতে পারি । যেমন সূর্যকে প্রকৃতপক্ষে ৮ মিনিট পরে দেখি আমরা ।

প্রথম কথা হলো মিরাজ মহান-নবী মুহাম্মাদ সা এর জন্য একটি মিরাকল বা মু'জেজা । মিরাকল এমনই ফ্যাক্ট যার মানেই হচ্ছে মানবীয় ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে আয়ত্ব করা সম্ভব না । যদি মিরাকল কে মানুষ বুঝেই ফেলে তবে সেটা আর মিরাকল থাকেনা ।

মিরাজের রাত্রিতে কি হয়েছিলো :

১. সুরা বণী ইসরাইলের প্রথম আয়াত, তিনি সেই পরম-পবিত্র মহিমাময় সত্ত্বা যিনি তার স্বীয় বান্দাহ কে এক রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত । যার পরিবেশকে করেছেন তিনি বরকতময় । যেন তাকে নিজের কিছু কুদরত দেখান । নিশ্চয় ই তিনি সবকিছুর শ্রোতা ও দ্রষ্টা ।

২. সুরা নাজ্ ম এর ১৩-১৮ আয়াত, ...পুনরায় আর একবার সে তাকে (জিবরাঈল্) সিদরাতুল মুনতাহার নিকটে দেখেছে । যার সন্নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত । সে সময় সিদরাকে আচ্ছাদিত করছিলো এক আচ্ছাদনকারী জিনিস । দৃষ্টিঝলসেও যায়নি কিংবা সীমা অতিক্রমও করেনি । সে তার রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ দেখেছে ।


-৬২২ খৃষ্টাব্দের ২৭ রজব মধ্যরাতে জিবরাঈল আ মুহাম্মদ সা এর কাছে এলেন "বুরাক" নামের বাহন নিয়ে । বুরাক শব্দটির অর্থ বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রিসিটি শব্দের সাথে সম্পর্কিত ...

- রাসুল সা এসময় ঘুমিয়ে ছিলেন । জিবরাঈল আ তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে আল্লাহর ম্যাসেজ পৌছে দিলেন । এসময় রাসুলুল্লাহ সা এর বক্ষ পুনরায় বিদীর্ণ করে জমজমের পানি দিয়ে ধোয়া হয় । হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী রাসুলের বক্ষ (অন্তর) প্রজ্ঞা এবং আলো [ইংরেজীতে wisdom ও splendour (special light "Noor") ] দিয়ে পূর্ণ করে দেয়া হয়!! রাসুল সা এরপর হাউজে কাউসর এর পানি তে গোসল করেন !

-মিরাজের যাত্রার দুটি অংশ ছিলো । প্রথমটি আনুভূমিক দ্বিতীয়টি উলম্ব । প্রথম অংশটিকে ইসরা বলা হয় । এসময়ের ভ্রমণটি ছিলো বায়তুল্লাহ (কাবা) থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত । বায়তুল মুকাদ্দাসে (মসজিদুল আকসা-ফিলিস্তীন) আল্লাহ তায়ালা সকল নবীর সমাবেশ ঘটান । এসময়ে সকল নবী এবং ফেরেস্তারা সম্মিলিতভাবে ২ রাকায়াত নামাজ আদায় করেন নবী মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সা এর ইমামতিতে ।

- এখান থেকে শুরু হয় উদ্র্ধমূখী যাত্রা । মানুষের কল্পণার অতীত গতিতে বোরাক ছুটে চলে মহাশূণ্যের দিকে । আকাশের প্রতিটি স্তরে প্রধান ফেরেস্তাগন এবং নবীদের সাথে সাক্ষাৎ এবং কথাবার্তা হয় রাসুলুল্লাহ সা এর সাথে । ১ম স্তরে হযরত আদম (Adam) আ, ২-য় স্তরে হযরত ইয়াহিয়া (John) আ এবং হযরত ইশা (Jesus Christ) আ, ৩-য় স্তরে হযরত ইউসুফ (Joseph) আ , চতুর্থ স্তরে হযরত ইদরীস (Enoch) আ, পন্ঞম স্তরে হযরত হারুন (Aaron) আ , ষ্ষঠ স্তরে হযরত মুসা (Moses) আ এবং সপ্তম স্তরে হযরত ইব্রাহীম (Abraham) আ মুহাম্মদ সা কে স্বাগতম জানান

- জীবরাইল আ এর বোরাক পরিচালনায় রাসুল সা সিদরাতুল মুনতাহা নামক স্থানে এসে পৌছলে উদ্র্ধমূখী যাত্রার দ্বিতীয় স্তর শুরু হয় । এপর্যায়ে জীবরাঈল আ আর অগ্রসর হতে অপারগতা প্রকাশ করেন ।

-বাহন পরিবর্তন হয় এখানে । রফরফ নামের আরেকটি যান রাসুলুল্লাহ সা কে আল্লাহর নিকটবর্তী স্থানে (!!) পৌছে দেয়ার দায়িত্ব নেয় !

আইনস্টাইন ও স্পেশাল থিওরী অব রিলেটিভিটি :

আলবার্ট আইনস্টাইন তার স্পেশাল থিওরী আব রিলেটিভিটি প্রকাশ করেন ১৯০৫ সালে এবং জেনারেল থিওরী অব রিলেটিভিটি প্রকাশ করেন ১৯১৭ সালে । এখানে সাধারন একটা প্রশ্ন মনে আসে তাহলো, কেন তিনি স্পেশাল থিওরী, জেনারেল থিওরীর আগেই প্রকাশ করলেন । জানিনা... কেউ জানলে জানাতে পারেন ...


প্রথম স্বীকার্য: Special Principle of Relativity - The laws of physics are the same in all inertial frames of reference. In other words, there are no privileged inertial frames of reference.

দ্বিতীয় স্বীকার্য: - Invariance of c - The speed of light in a vacuum is a universal constant, c, which is independent of the motion of the light source.


এ থিওরী থেকে প্রাপ্ত ফলাফল :

১. টাইম ডায়ালেশন (সময় দীর্ঘায়ণ) : একই ঘটনার , স্থির কোন স্থানে পরিমাপকৃত সময়ব্যবধান ধ্রুববেগে গতিশীল স্থানে পরিমাপকৃত সময় ব্যবধানের চাইতে বেশি । (অর্থাৎ রুমে বসে ব্লগ লিখতে ৩ মিনিট লাগলে কোন মহাকাশযানে বসে লিখতে হয়তো ১ মিনিট লাগবে- ব্যাপারটা এরকম...)


২.Relativity of simultaneity : মনে করুন, আপনি কোথাও দাড়িয়ে একই সাথে ২ টি ঘটনা ঘটতে দেখছেন । কিন্তু ওই ঘটনাদুটিই অন্য কোন স্থান ( ধরুন, গতিশীল) থেকে অন্য কেউ একই সাথে ঘটতে দেখবে না । সে দেখবে একটি ঘটনা শেষ হবার পর বা শুরু হবার কিছুক্ষণ পর আরেকটি শুরু হলো ।

৩. লরেন্জ কনট্রাকশন : একই বস্তুর ডাইমেনশন (দৈর্ঘ্য..উচ্চতা..) গুলো দুটি ভিন্ন গতিতে গতিশীল স্থান থেকে মাপলে ভিন্ন ভিন্ন পাওয়া যাবে ।


৪. বস্তু গতিশীল হলে এর ভর বৃদ্ধি পায়....

৫. E = mc² ......... ভর আর শক্তি একই সত্তার ভিন্ন রূপ এবং রূপান্তরযোগ্য ।





মি'রাজ ও স্পেশাল থিওরী অব রিলেটিভিটি :

১. রাসুলুল্লাহ সা এর উদ্র্ধগমনের সম্ভ্যাব্যতার ব্যাপারটি নিয়ে প্রশ্নের কোন অবকাশ ই নেই । যেহেতু মহাকাশ ভ্রমন সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক থিওরী -ও আজকাল অনেক পুরোনো হয়ে গেছে ।

২. অন্তত একজন হলেও লাইট-স্পিড বা এর চেয়ে বেশি গতিতে ভ্রমণ করতেই হবে আইনস্টাইনের সূত্রকে বাস্তবতা দেয়ার স্বার্থে হলেও । ধরে নেই সেই ভ্রমণকারী মুহাম্মাদ সা ।

৩. মহাবিশ্ব ভ্রমণ শেষে রাসুল সা ফিরে এসে দেখতে পান, দরজার শেকল ঠিক আগের অবস্থানে দুলছে । এতবিশাল স্থান অতিক্রম করার পরেও সময়ের কোন হেরফের কিভাবে না হয়ে পারে ?

উত্তর ১: আল্লাহ ইজ অলমাইটি..
উত্তর ২: স্পেশাল থিওরী অব রিলেটিভিটির; টাইম-স্পেস-ভেলোসিটি রিলেশন । আলোর গতির সমান গতিতে চললেই সময় স্থির হয়ে যাবে খুব সহজে । তখন সময়কে ধরে রেখে যতখানি ইচ্ছা কাজ করে নেয়া সম্ভব । টাইম ডায়লেশন এবং Relativity of simultaneity মূলত এ দুটি ফলাফল এ ঘটনার ব্যাখ্যা ।


৪. আলো ১ বছরে ৯.৪৬ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার পরিমান স্থান অতিক্রম করতে পারে । এবং বলা হয় পৃথিবীকে কেন্দ্র ভাবলে দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ ৪৬.৫০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ । অর্থাৎ আলোর গতিতে চললেও এই দৃশ্যমান মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে পৌছুতে এত বিশাল সময়ের প্রয়োজন । যদিও মহাবিশ্বের সত্যিকার ব্যাস আরো অনেক অনেক বেশি । তো, প্রশ্ন দাড়ালো রাসুল সা কিভাবে এত বিরাট সময়কে অতি অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারলেন ?

উত্তর : স্পেশাল রিলেটিভিটি থিওরী থেকে প্রাপ্ত লরেন্জ কন্ট্রাকশন ফলাফল । এ ফলাফল অনুযায়ী গতিশীল অবস্থানে দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়ে যায় । অর্থাৎ রাসুল সা এর জন্য গতির কারনে মহাবিশ্বের বিশাল দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে গিয়েছিলো । আল্লাহ ই জানেন , আসলে কি হয়েছিলো !!


৫. E=mc2 সূত্র অনুযায়ী, কোন বস্তু আলোর গতিতে চলমান হলে তা বস্তু থেকে শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে যাবে । এই শক্তি যখন পুনরায় বস্তুতে রুপান্তরিত হবে তখন কিছু পরিমান লস হবে যা mass defect বলে পরিচিত । কোন জীবন্ত শরীর এই প্রকৃয়ার মধ্য দিয়ে গেলে নাকি তার শারীরীক কিছু পরিবর্তরন হওয়া উচিত । যেমন শরীরের অংগ প্রত্যংগ গুলোর অবস্থান পরিবর্তন । কিন্তু মিরাজের ক্ষেতে এমনটা হয়নি । কেন ?

উত্তর : এখানে একটি ব্যাপার মনে করিয়ে দিতে হবে আবার । মি’রাজ ছিলো একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা যা বাস্তবে ঘটেছিলো । এটি কোন থিওরী বা সূত্র বা ধারনা নয় । এটি বাস্তবতা ।

যেকোন সূত্রকেই বাস্তবে সত্য হতে হলে কিছু শর্ত সম্পন্ন হওয়া লাগে । খুব সাধারন কিছু ব্যাপার উদাহরনস্বরূপ, তাপ-চাপ-.. ইত্যাদি.....

যতদুর ভাবা যায়, মিরাজে; আইনস্টাইনের থিওরীর এই অংশকে অতিক্রম করা হয়েছিলো কিছু পূর্বপ্রস্তুতির মাধ্যমে । যাত্রার পূর্বে মহানবী সা এর বক্ষ বিদীর্ন করা, অন্তর প্রজ্ঞা ও নুর দিয়ে পূর্ণ করে দেয়া.. এসবের সত্যিকারের রহস্য আমরা জানিনা এখন ও.....

5 comments:

  1. All I can say is nothing because your blog is not interesting to read.

    ReplyDelete
  2. Ive read this topic for some blogs. But I think this is more informative.

    ReplyDelete
  3. -bangla may not interesting to read :D but i've nothing to do :))

    -this blog may not comfortable to your sight/eye :P still i've nothing to do ;-)

    দ্বিতীয় মন্তব্যটার মানে কি এরকম, "আমি এই টপিক আরো কিছু ব্লগে পড়েছি, কিন্তু এটা আরো ইনফরমেটিভ হওয়া উচিত " ?

    তাহলে, দুখ্খিত, এর বেশি কিছু আমার সাধ্যে কুলায় নি :)

    ReplyDelete
  4. ধন্যবাদ বি.স.
    আপনার লিখাটা পড়ে খুব ভালো লাগল। আমার কাছে আইনষ্টানের থিওরি অব রিলেটিভিটি সবসময় খুবই মজার একটা জিনিস। এটা নিয়ে চিন্তা করতে খুব ভালো লাগে এবং এটা দিয়ে আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে চিন্তা করে মাঝে মাঝে ভালোই সময় কাটে। তারপর সবকিছু "আল্লাহ ইজ অলমাইটি"-তে গিয়ে শেষ হয়।

    কাল দীর্ঘায়ন, দৈর্ঘ্য সংকোচন আর ভর বৃদ্ধির মধ্যে আমার কাছে কাল দীর্ঘায়নটা সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং।

    ReplyDelete
  5. সময়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারার ব্যাপার টা ভাবলে আসলেই মজা লাগে :) থ্যাংকু তরঙ্গ :D

    ReplyDelete